গত ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ইং তারিখে “রিজার্ভে হাত না দিয়ে সোয়া দেড় বিলিয়ন দায় পরিশোধ” নামক আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এবং তা সবারই দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নিঃসন্দেহে বর্তমান জটিল বাস্তবতায় এটা একটা অবিস্মরণীয় অর্জন। যেকোন অভূতপূর্ব অর্জন তাই বিশ্লেষণ ও সমালোচনার দবি রাখে- যা সেই অর্জনের ভিত্তিকে আরো মজবুত করে।
গভর্ণর মহোদয়ের অনেক দিক নিয়ে সংক্ষিপ্ত কিন্তু অনেক তথ্যবহুল যে বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে সেখানে অনেক বিষয়ের উল্লেখ থাকলেও- দেড় বিলিয়নের উৎসের উল্লেখ দেখা গেলো না। বিষয়টি রহস্যজনক, কেননা অতীতেও আমরা বাস্তব অবস্থায় হাততালি দিলেও ভবিষ্যতে মাশুল দেওয়ার ইতিহাস বয়ে বেড়িয়েছি।
যাই হোক, গভর্নর মহোদয়ের পুরো বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করলে যে বিষয়গুলো মোটাদাগে উঠে আসে সেগুলো হল- পরিশোধের খাত, ঋণের পরিমাণ, নতুন বিনিয়োগ সম্ভাবনা,পরিশেষে সম্পূর্ণ জাতীয় অর্থনীতির গন্তব্য।
প্রথমেই, গভর্নর মহোদয় স্পষ্ট করেছেন যে এই দেড় মিলিয়ন বকেয়ার অর্থ পরিশোধে ব্যবহৃত হয়েছে, যা কি না বিগত ২ মাসে অপরিশোধিত ছিল। অর্থাৎ, এই অর্থ ঋণ পরিশোধে নয় বরং ঋণ পরিশোধ না করতে পারায় সৃষ্ট বকেয়া পরিশোধে ব্যয়।
যেই খাতে ব্যয় হলো- তা বিদ্যুত, সার, জ্বালানির মত খাতের পাওনাদারদের দায়। এই জরুরি সেবার পাওনা কতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে এই খাতের দায় মেটানোকে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ এই খাত দুটি কৃষি এবং শিল্পায়নের সাথে জড়িত অপরদিকে সার কৃষি খাতের সাথে সম্পৃক্ত। পরিশোধের খাত বিশ্লেষণে অনুমান করা যায় গভর্নর মহোদয় যে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা নেই বলেছেন- কথাটা কোন ভিত্তিতে বলেছেন এবং তা অন্তত আগামী এক বছরের জন্য। সেক্ষেত্রে, পোশাক শিল্প খাত, উৎপাদনমুখী ব্যবসায়িক খাত অনিবার্য হুমকির মুখে পড়বে। শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কা অর্থনীতিকে যেমন ঝুকিতে ফেলার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে তেমনি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও উস্কে দিতে পারে।
একদিকে, ঋণের বোঝা, অপরদিকে উৎপাদন সংকটমুখী- রপ্তানি খাতের সংকোচন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথটাকেও সংকুচিত করে ফেলবে।
এমন বাস্তবতায়, গভর্নর মহোদয় আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক থেকে সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য ৫ বিলিয়ন ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন। ইতোমধ্যে ঋনের পরিমান ১০৩ বিলিয়ন ডলার, নতুন করে ঋণ, এই অর্থনীতিকে কতটুকু সামাল দিতে পারবে তা নির্ভর করবে গভর্নর মহোদয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সদস্যদের উপর।
সর্বদিক বিবচনায়, গভর্নর মহোদয়ের ধৈর্য ধরার আহ্বানে সাড়া দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ এ মুহূর্তে খোলা আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।